মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে দীর্ঘ তেরো বছর পরে শুভ্র বাড়ীতে ফিরছে । সে জানে না মা সত্যিই অসুস্থ কিনা । কারণ তাকে এর আগেও বাবার অসুস্থতার কথা বলে জরুরী তলবে বাড়ীতে আনা হয়েছিল একবার । সেদিন এসে দেখেছিল বাবা তার জন্য বিয়ে ঠিক করে বসে আছেন ! যদিও বাবা খুব ভাল করে জানে শুভ্র এখনো ভালবাসে তানিয়াকে । "তানিয়া" শুভ্রর দেয়া নাম । আসল নাম জুলেখা বেগম । গ্রামের ভীতর শুভ্রর বাবার বেশ আধিপত্য ও অনেক দাপট আছে । ধনদৌলতের দিক থেকে তাদের মত করে আশে পাশের দশ গ্রামেও আর কেউ নেই । কিন্তু তানিয়া একজন হতদরিদ্র কৃষক বাবার পাঁচ সন্তানের মাঝে প্রথম সন্তান। এ যেন ঘন কুয়াশার মাঝে এক চিলতে রোঁদের হাসি । অথবা আবর্জনার মাঝে অযত্নেও বেড়ে উঠা একটাই গোলাপি পদ্ম ।
গ্রামের হেডমাস্টার একরকম জোরাজুরি করেই তানিয়াকে স্কুলে নিয়েছিলেন । না হলে আজ মায়ের সাথে হয়ত শুভ্রদের বাড়ীতেই কাজ করতে হত তাকে। কৃষক বাবা একসময়ে শুভ্রদের জমিতে বর্গা চাষ করতেন কিন্তু এখন বয়স হওয়াতে আর জমিতে হাল দিতে পারেন না । শুভ্রর বাবার দেয়া একখণ্ড জমিতে সবজি চাষ করে তা বিক্রি করে খুবই কষ্টে তাদের দিন যায় ...।
তানিয়ার মত মেয়ে আশে পাশের গ্রাম তো দূরে থাক,এই জগতে দ্বিতীয়টি পাওয়া যাবে কিনা শুভ্রর সন্দেহ আছে । যেমন রূপবতী তেমনি বুদ্ধিমতী । লেখা পড়ায় শুভ্রর চেয়েও অনেক বেশী মেধাবী । তথাপি এসএসসি পরীক্ষায় বোর্ডের মধ্যে সেরা রেজাল্ট করা স্বত্বেও তানিয়া পড়াশুনাটা আর করতে পারল না । ওর গরীব বৃদ্ধ বাবাই চায়না মেয়ে আর পড়াশুনা করুক । শেষে বিয়ে দিতে পারবে না । তানিয়ার বাবার ধারনা মেয়েকে এখন বিয়ে দিলে তাও একটা ছেলে পাবে কিন্তু বেশী শিক্ষিত হলে ওর সমকক্ষ ছেলে পাওয়া যাবে না এবং গ্রামের কেউই তাকে বিয়ে করতে রাজী হবে না।
এদিকে শুভ্র পড়াশুনার জন্য চলে যায় শহরে । তবে মনটা পড়ে থাকে সুন্দর ,সবুজ -শ্যামলে ঘেরা এই গ্রামে , তানিয়ার কাছে ! তানিয়াও ভীষণ ভালবাসে শুভ্রকে । কিন্তু তা প্রকাশ করার দুঃসাহস তার নেই । দরিদ্র নামে এক অভিশপ্ত সমাজে তার বেড়ে উঠা । ক্ষুধার কষ্ট আর ক্লিশিত জীবন এ যেন জন্ম জন্মান্তরের পাওয়া ! সেই ছোট বেলা থেকেই দুজনে দুজনার খুব ভাল বন্ধু । লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুরে বেড়ায় দুজনে । কখনো নৌকায় কখনো বা মাটির টিলায় উঠে দুজন দুজনের মত করে কথা বলে । শুভ্র বলে তানিয়ার সাথে সংসার আর স্বপ্ন পূরণের কথা ! আর তানিয়া বলে তিন বেলা কিভাবে মা, বাবা আর ছোট ভাই বোনকে পেটপুরে খাওয়াতে পারবে তার কথা । শুভ্র শহরে যাবার সময় স্পষ্টভাবেই তানিয়াকে বলে যায় সে কতটা ভালবাসে তাঁকে । তানিয়া কিছুই বলে না জবাবে । শুধু শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে শুভ্রর চোখের দিকে । সেই চাহনিতেই শুভ্র আবিষ্কার করে ভালবাসার গভীরতা ! তারপর , অপেক্ষার পালা ।
একদিন তাদের এই সম্পর্কের কথা প্রকাশ পেয়ে যায় । পবিত্র বন্ধুত্বের মাঝে রূপকথার নিটোল শৈল্পিক চেতনা ভর করে ! এককান দুকান হতে হতে শুভ্রর বাবার কানে কথাটা যায় । ফলশ্রুতিতে তানিয়ার বাবাকে ডেকে পনেরো দিনের মধ্যে মেয়ের বিয়ে দেবার কথা ঘোষণা করে শুভ্রর বাবা । না হলে তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করা হবে। এ যেন প্রজার প্রতি স্বৈরশাসকের কড়া হুকুম ! কিন্তু যৌতুক ছাড়া কেউ কি বিয়ে করতে রাজী হবে ? আর যতই পেটে বিদ্যা থাক এত গরীব মানুষের ঘরের মেয়েকে কে বৌ করবে ? এগিয়ে আসে পাশের গ্রামের মাদ্রাসার মৌলভী সাহেব । তিনি তিন নম্বর বৌ করে নিয়ে যায় তানিয়াকে ! অবশ্য মৌলভীর আগের দুই বৌয়ের বাচ্চা হয়নি বলে তাঁদেরকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন । তার বিশ্বাস তানিয়ার কোল জুড়েই আসবে আগামী বংশধর ! শুভ্র তানিয়ার বিয়ের খবর শুনে গ্রামে ছুটে এসেছিল কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে । তানিয়া চলে গেছে একটা গ্রামের পরের গ্রামে ,স্বামীর বাড়ীতে !
শুভ্রর আর এই গ্রাম ভাল লাগে না । গ্রামের সব সৌন্দর্য মলিন হয়ে গেছে । সে আর এই গ্রামে আসবে না ,কোন দিন না ! প্রায় তিন বছর সে গ্রামে আসেনি । তারপর একদিন খবর পায় বাবা খুব অসুস্থ । ছুটে আসে সে কিন্তু এসে দেখে সব বাবার নাটক । রেগে যায় শুভ্র তাকে এমন করে শহর থেকে এনে বিয়ে দিতে চায়ছে বলে ! যা কোনদিনই কোনভাবেই সম্ভব না । সে জীবনে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এদিকে বাবাও একমাত্র সন্তানকে বিয়ে দিতে হাত ধুয়ে নেমেছেন কিন্তু পারছেন না । মায়ের আহাজারি আর কান্নায় সে কিছুদিন গ্রামে থেকে যায় । শুভ্র ভাবে এই একটা জায়গায় হয়ত প্রতিটা সন্তানকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও হার মানতেই হয় !
শুভ্র একদিন হাঁটতে হাঁটতে তানিয়াদের বাসায় যায় দেখে তানিয়া সেখানে । খুশীতে ভরে উঠে তার মন ! তানিয়া অনেক শুকিয়ে গেছে । চেহারাটা ঠিক যেন এই গ্রামের সৌন্দর্যের মত ধূসর, মলিন লাগছে । দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকায় । শুভ্র সেই একই দৃষ্টির প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় তানিয়ার চোখে । নিজের বুকটার মাঝে একধরণের নতুন সুরের ধ্বনি শুনতে পায় । ভালবাসা বুঝি এমনই হয় ! ভালবাসা সেতো হারাবার নয় । ক্ষণিকেই থমকে গেছে সারা পৃথিবী । মুহূর্ত ঘিরে রাখে বেদনার নীল অর্ঘ । অভিমানের অনুরাগে ভীরু কাঁপা দুটি ঠোঁট বাকরুদ্ধ । আজ কতদিন পরে প্রিয় বন্ধুটিকে দেখে তানিয়াও বিস্ময়ে হতবাক । তানিয়াকে দেখে শুভ্রর মনের দুয়ারের কড়া নেড়ে জন্ম হয় অনেক প্রশ্নের । ভালোবাসার মানুষকে একা পেয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না সে । ছোট্ট বেলায় বানানো নাড়ায় ঢাকা কাঠের ঘরটাতে তানিয়াকে টেনে নিয়ে যায় ! তিন বছরের চাপা কষ্ট আর হাজারো না বলা কথা আজ রক্তস্রোতের বান ডাকে হৃদয়ের পরতে পরতে
-"তুমি কেন অমন করে হঠাৎ বিয়ে করে ভীন গাঁয়ে চলে গেলে ? কেন আমার জন্য অপেক্ষা করলে না ?"
আজ তানিয়ার দুচোখে এক ফোটা পানিও নেই ! সব যেন চরে ঢাকা নদীর মত শুকিয়ে গেছে ! ক্ষীণ স্বরে বলে
-"তোমার সব প্রশ্নের উত্তর একটাই -আমার মত গরিব ঘরের মেয়েদের কাউকে ভালবাসতে নেই । তাদের স্বপ্ন দেখতে নেই । "
-"কিন্তু তুমিতো জানতে আমি তোমাকে কত ভালবেসেছি ।"
-"এসব এখন আর বলে কি হবে ! সবই আমার কপাল !" তানিয়ার হৃদয়ে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়া বয় । উত্তপ্ত গলিত লাভা ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজিয়ে দিয়ে যায় মন , খুবই নীরবে ,সংগোপনে ।
-"কিন্তু তুমি স্বামীর বাড়ী ছেড়ে এখানে কেন?" কৌতূহলটা লুকিয়ে রাখতে পারে না শুভ্র !
তানিয়াও কোন ভণিতা না করে আনমনে বলে চলে-
- "আজ দুদিন আমি এখানে । আমার স্বামীর আগের দুই বৌয়েরই বাচ্চা হয়নি আর তাই তাদেরকে তিনি তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন । সবাই বিয়েতে যৌতুক নেয় । কিন্তু আমার স্বামী -আমাকে বিয়ে করার জন্য আমার বাবাকে আরও যৌতুক দিয়েছেন ! তিনটা বছর আমার স্বামী আমাকে রাজরানীর মত করে রেখেছেন ! খেতে দিয়েছেন , পরতে দিয়েছেন কিন্তু আমি আমার স্বামীকে কিছুই দিতে পারিনি ! শুধু ছোট্ট একটা ডাক , জীবনের একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা আমি করতে পারিনি ! আমি এভাবে হেরে যেতে চাইনি...আসলে আমি একটা ..." কথাটা আর শেষ করতে পারে না কান্না চেপে ধরে আঁচলের কোণে । একটু থেমে আবার শুরু করে
-"আমার স্বামী আমাকে তালাক দেয়নি এখনো ! তিনি মেয়ে খুঁজছেন যেদিন বিয়ে করবেন , সেইদিনই আগে আমাকে তালাক দিবেন" শুভ্র কি বলবে বুঝে পায় না । নিজের অজান্তেই তানিয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে কখন তুলে নিয়েছে সে টেরও পায়নি ! তানিয়া কি এক আবেশে মোহিত হয়ে যায় । সে সরাসরি তাকায় শুভ্রর দিকে । জিজ্ঞাসা করে
- "কেন আমার জীবনটা এমন হল ? কে এর জন্য দায়ী ? আমি এখন কি করব ? কিভাবে আমি বাঁচবো ?" শুভ্র বুঝতে পারে তানিয়া এখনও ভালবাসে তাকে । আলতো করে তানিয়ার মাথাটা টেনে নেয় নিজের বিশাল বুকে ! তানিয়াও সপে দেয় নিজেকে । এভাবে হারানো ভালবাসার নদীতে সাতার কেটে কেটে চলে দুজনে । পৌঁছে যায় অর্বাচীন ভালবাসার স্বর্গ শিখরে ! তানিয়ার জীবনে এমন সুখ সত্যিই কি লেখা ছিল ? শুভ্র তানিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে-
-"আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই তানিয়া " বিয়ে কথাটা কানে পৌছাতেই মনে পড়ে যায় শুভ্রর বাবার কথা -"গ্রাম ছাড়া করবে,এক ঘরে করে দেবে " তানিয়া চায়না তার বাবা এই বয়সে এতো কষ্ট পাক । শরীরের মাঝে যেন বিদ্যুৎ চমকিত হয় । আকস্মিক ঘটনায় বিমুঢ় হয়ে ছুটে যেতে চায় সে । ফিসফিস করে আপন মনে বলে
- "আমি এমন পাপ করতে চাইনি ! আমাকে ক্ষমা কর ..." শুভ্র হাজার বোঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু তানিয়া কোন কথা শুনতে রাজি না । তানিয়ার সারা মন আজ বলছে শুভ্রর সাথে দূরে কোথাও হারিয়ে জেতে কিন্তু শুভ্রর জীবনে সে সুখ দিতে পারবে না, তা সে জানে । আগে তো শুধু গরীব কৃষাণের মেয়ে ছিল আর এখন সে আরেক জনের স্ত্রী । নাহ শুভ্র-এর কথায় নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করলে চলবে না । আর তাই তানিয়া ক্ষোভে ফেটে পড়ে -
- "যাও আমার সামনে থেকে... চলে যাও ! আজ তোমার বাবার জন্য আমার এই অবস্থা আর আজ তুমি আমার একি সর্বনাশ করলে । সব ষড়যন্ত্র ,যাও আমি আর কোন দিন তোমার মুখ দেখতে চাই না..."!
শুভ্র নিজের কানকে কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না ! তার বাবার জন্য আজ তাদের জীবন নষ্ট হল । তাঁর জন্যই এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন...! ছুটে যায় বন্ধু মিহিরের কাছে এবং সব সত্য শুনতে পায় । তার বাবাই তানিয়ার বাবাকে বাধ্য করেছিল ঐ বুড়ো মৌলভীর সাথে মেয়েকে বিয়ে দিতে ! ঘৃণা আর লজ্জায় সেইদিনই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায় শুভ্র আর কোন দিন আসেনি ! ওদিকে তানিয়া দু'বার আত্মহত্যা করতে যায় । কিন্তু কি এক নতুন স্বপ্ন, একটা স্বর্গীয় ডাক তাকে আবিষ্ট করে রাখে । বাঁচিয়ে রাখে জয়ী হবার বাসনায় , এক অসীম সুখের মোহনায় !
শুভ্র গ্রাম ছেড়ে আসার দুমাস পরে তানিয়ার স্বামী তানিয়াকে নিয়ে গেছে কারণ তানিয়া মা হতে চলেছে । সে অনেক সুখে আছে ! এটাই তো শুভ্র সারাটা জীবন চেয়েছে । কিন্তু উপরে যিনি বসে আছেন তাঁর চাওয়াই তো শ্রেষ্ঠ চাওয়া । সেখানে অন্য কারো কোন চাওয়া মূল্যহীন , বাতাসে উড়ে যাওয়া শুঁকনো পাতা ! বাচ্চা হতে গিয়ে তানিয়া ঐ উপরেই চলে গেছে আকাশের তারা হয়ে । কিন্তু স্বামীকে দিয়ে গেছে একটি চাঁদের টুকরো মেয়ে ! শুভ্র এখনো বেঁচে আছে ...! নাড়ীর টানে সব অভিমান ভুলে আজ অসুস্থ মাকে দেখতে দীর্ঘ তেরো বছর পরে সে ফিরে চলেছে আপন মাটির কোলে !
নৌকার ঝাঁকিতে ফিরে তাকায় সামনের দিকে ! নৌকা যে কখন পাড়ে ভিড়েছে সে খেয়ালও করেনি শুভ্র ! বোরকা পরিহিতা একটা মেয়ে আর একটা বুড়ো লোক উঠেছে নৌকাতে ! মেয়েটা বকবক করেই যাচ্ছে । আর তাই বুড়ো লোকটি রাগ করে বকা দিচ্ছে । কেন এত কথা বলছে সে জন্য ! বুড়ো লোকটি আস্তে আস্তে বলে
- "নৌকার ভীতর কত পুরুষ আছে ,এত কথা কেন বল ? একটু মুখটা বন্ধ রাখ না মা তাশু !" শুভ্র নামটা শুনে চমকে যায় "তাশু" "তাশু" "তাশু" ! মনে পড়ে একবার মজা করে তানিয়াকে বলেছিল
- "আমি তোমাকে বিয়ে করবোই । আর আমাদের যখন বাচ্চা হবে , ছেলে হোক বা মেয়ে - নাম রাখবো তাশু ! তানিয়ার "তা" আর শুভ্রর "শু" ="তাশু " ! কথাটা শুনে সেদিন তানিয়া হেসে গড়াগড়ি খেয়েছিল -
-"ইস জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে রাজপুত্র !”
-“আমি ছাড়া তোমার বরও জুটবে না”বীরের মত বলেছিল শুভ্র । তানিয়া বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলেছিলো
-“কচু...এই ঘুটোকুড়ানী আপনাকে কোনদিনই বিয়ে করবে না ......!" কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না ।
- "দাড়াও মজা দেখাচ্ছি...!" দুজনে ক্ষেতের আইল ধরে ছুটে গিয়েছিল । আর দুজনের হাসিতে সারা গ্রামের বাতাস যেন সেদিন আনন্দের সুধা পান করে মাতাল হয়েছিল । আপন মনে শুভ্র হেসে উঠে । পরক্ষনে ভাবে-"কিন্তু এ কোন তাশু ? "
শুভ্রর চোখ এক মুহূর্তের জন্য সরে না মেয়েটির দিক থেকে ! ভারী কাঁচ ভেদ করে হয়ত কেউ বুঝতে পারছে না শুভ্র এমন করে তাকিয়ে আছে কিশোরী মেয়েটির দিকে । মেয়েটি এক সময় ভীষণ বিরক্ত প্রকাশ করে । বলে উঠে-
- "দূর আজকে এত গরম পড়ছে ।”
-“মা জননী একটুই তো পথ... ধৈর্য হইতাছে মাইয়াগো সব চাইতে বড় গুণ...শান্ত হইয়া বসো মা...”মেয়েটা যাতে আব্রু না খোলে তাই কাঁপাকাঁপা হাতে বৃদ্ধ লোকটি হাতের পাখায় দ্রুত বাতাস করে চলেছে । কিন্তু মেয়েটি যেন সব বাঁধন ছিঁড়ে প্রজাপতির ডানায় উড়তে চায় । কোন কথা শুনতেই সে রাজী নয় । রাগে বলে উঠে
-“এই কালো কাপড়ের মধ্য থাইকা দম নিতেও অনেক কষ্ট হইতাছে ...বাজান আপনে পইরা দেহেন কি আজব...উফফ " কথাটা বলেই নেকাব সরিয়ে ফেলে ! অভিমানে কিশোরী মেয়েটা গোলাপি ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে ঠিক সেই একই রকমভাবে... অবাক হয় শুভ্র ! সেই চোখ , সেই নাক ,সেই ঠোঁট,"তানিয়া ...!" একটা শীতল দমকা হাওয়ার আবেশ শুভ্রর চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে এক অনাবিল আনন্দের শিহরণ জাগায় । শুভ্রর দু’চোখের কিনারা ঘেঁষে ঘন ধূসর কুয়াশা । ঝাপসা চোখে তাকায় আকাশের দিকে । চারিদিকে রোদ অথচ ঠিক মাথার উপরে একটুকরো গাড় কালমেঘ , সে যেন কিছু বলছে ! ক্ষণিক ঝুমঝুম এক পশলা উষ্ণবৃষ্টি । চোখের পাতায় ফোঁটা ফোঁটা স্পর্শ - এ এক অভিনব সুখের ,আনকোরা অনুভূতি । শুভ্র অস্ফুটে বলে উঠে -"তানিয়া ..... আমি তোমাকে আজীবন ভালোবেসে যাব ....!"
গলা ছেড়ে কি এক বেদনা বিধুর সুরে গান গেয়ে যায় মাঝি ।"আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে...অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাইরে ......।" সাথে বৈঠা আর পানির সংবেদন সুর –ছ-লাৎ ছ-লাৎছ-ল...... ছ-লাৎ ছ-লাৎ ছ-ল......
২৭ মে - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪